পঞ্চখণ্ড আই প্রতিবেদক : বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের নির্বাচন আর মাত্র এক'দিন বাকি। এবারের বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে কে এগিয়ে - এ নিয়ে চলছে নানামুখী হিসাব-নিকাশ। সাধারণ ভোটাররা বিশ্লেষণ করছে, মানুষ কার কাছে নিরাপদ? কে বেশি উন্নয়ন করতে পারবে? এরূপ আলোচনা এখন ভোটারদের মুখে মুখে। সময়ের ব্যবধানে ভোটের মাঠের চিত্র পাল্টাতে শুরু করেছে। ভোটের তারিখ যতই আগাচ্ছে রাজনৈতিক বলয়সহ নানা ইস্যুতে ভোটের বাজারের সুইং বার্তাও একেক এলাকায় একেক রকম ধারণ করছে।
এ নির্বাচন উপলক্ষে চলমান প্রচারাভিযান, গণসংযোগ আর উঠান বৈঠক শেষের দিকে। এবারের নির্বাচন দলীয়ভাবে না হলেও এখানে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ৯ জন প্রার্থী। তন্মধ্যে ৮ জনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদধারী ৭জন প্রভাবশালী নেতা রয়েছেন।
এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান খান (টেলিফোন), সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাকসুদুল ইসলাম আউয়াল (মোটরসাইকেল), যুগ্ম সম্পাদক আবুল কাশেম পল্লব (হেলিকপ্টার), সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারি কলেজের সাবেক সহসভাপতি জাকির হোসেন (কই মাছ), উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও জেলা শাখার সদস্য আব্দুল বারী (দোয়াত কলম), উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান জামাল হোসেন (আনারস), যুবলীগ নেতা ও লাউতা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গৌছ উদ্দিন (শালিক পাখি), প্রভাষক জহির উদ্দিন (ঘোড়া) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জাকির হোসেন সুমন (কাপ পিরিচ)।
চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি আতাউর রহমান খান দলীয় মনোনয়নে ২০১৪ সালের উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী ছাত্রলীগ নেতা আবুল কাশেম পল্লবের নিকট পরাজিত হন।
চেয়ারম্যান প্রার্থী স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাকসুদুল ইসলাম আউয়াল দলীয় পদের পাশাপাশি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের স্থানীয় এপিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং উন্নয়ন কার্যক্রমে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। তিনি এবারই প্রথম নির্বাচন করছেন।
এদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রার্থী না থাকায় এবারের নির্বাচনে আওয়ামী ঘরানার প্রার্থীদের মধ্যেই ভোট ভাগাভাগি হবে। এ ভাগাভাগির বদৌলতে স্থানীয় বিয়ানীবাজার আওয়ামী লীগ এখন ছয় খণ্ডে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এটা দলের জন্য ভালো ফল বয়ে না-ও আসতে পারে।
এ পরিস্থিতিতে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতাউর রহমান খান'র ভাষ্য, 'এটা তো দলীয় নির্বাচন নয়। তাই দলের যে কেউ ভোটে দাঁড়াতে পারে। তা ছাড়া জনগণ আমাকে চাচ্ছে। তাদের সম্মান জানাতেই আমি নির্বাচন করছি। এটি আমার শেষ নির্বাচন। আশা করি মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে।'
উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও দলের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাকসুদুল ইসলাম আউয়াল বলেন, 'নির্বাচন একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, এখানে একাধিক প্রার্থী থাকবেই। দীর্ঘ দিন থেকে মানুষ আমাকে উপজেলা নির্বাচন করার জন্য চাপ দিচ্ছেন। বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরাও আমাকে নির্বাচন করতে বলেছেন। তাদের জন্যই আমি নির্বাচনে অংশ নিয়েছি।
চেয়ারম্যান প্রার্থী (বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান) স্থানীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবুল কাশেম পল্লব বলেন, রাজনীতি ও উন্নয়নের দিক থেকে নির্বাচন একটা প্রক্রিয়া। নেতা-কর্মী, জনগণ আমার রাজনীতির মূল শক্তি। নেতাকর্মী-সমর্থক ও অনুসারীদের ডাকে আমি বারবার পরীক্ষা দেই। আর নির্বাচনে নেতার নেতৃত্ব যাচাই-বাছাই হয়। তাই অর্জিত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে উপজেলার মানুষের আগ্রহে চলমান উন্নয়ন গতিশীল রাখতে আমি পুনরায় প্রার্থী হয়েছি। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে এটাই আমার শেষ নির্বাচন।
উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ভিপি জাকির হোসেন গেল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে পরাজিত হোন। এছাড়াও ছাত্রলীগের সাবেক প্রভাবশালী নেতা আব্দুল বারী, যুবলীগ নেতা ও লাউতা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান গৌছ উদ্দিন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রার্থী হয়ে ভোটের মাঠে আলোচনায় রয়েছেন। অপর দুই নতুন প্রার্থীর মো: জহির উদ্দিন বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের খন্ডকালীন প্রভাষক ও সাংবাদিক। তিনিও আওয়ামী লীগ ঘরানার লোক। আর প্রবাসী চেয়ারম্যান প্রার্থী জাকির হোসেন সুমন ২০১৬ সালে ধানের শীষ প্রতীকে মাথিউরা ইউপি নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন।
এ নির্বাচনে মাঠের খবর জানতে গিয়ে কথা হয় বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ, ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার, শ্রমজীবী প্রতিনিধি, সংবাদকর্মী ও নির্বাচন বোদ্ধাদের সাথে। তাদের আলাপচারিতায় এ নির্বাচনকে ঘিরে মূলত: দু'মুখী তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
তন্মধ্যে একপক্ষ চায় ক্ষমতার পরিবর্তন। পরিবর্তন প্রত্যাশি পক্ষের ভাষ্য, যে প্রার্থী জিতলে টিআর-কাবিখার উন্নয়ন বেশি হবে সে প্রার্থীকে জেতাতে মাঠের কর্মীরা তৎপর রয়েছে।
অন্যপক্ষ, ক্ষমতা পরিবর্তনের বিপক্ষে । তাদের ভাষ্য, ‘উপজেলার’ কর্তৃত্ব ধরে রাখতে প্রতিবাদী নেতৃত্বের হাত শক্তিশালী করতে মাঠের কর্মীরা নানা কৌশলে এগোচ্ছে। আবার কেউ কেউ মায়নাস ফর্মুলায় বিশেষ জাতের দোহাই তুলে বৈতরণী পাড়ির তৎপরতাও চালিয়েছে। বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় প্রতিনিধি ও আমপাবলিকদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
আর অপরদিকে আওয়ামী ঘরানার বেশি সংখ্যক নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ। তারা চিন্তিত দলীয় বিভাজন নিয়ে। তবে তারা ভোট দিতে নির্বাচনী ভোট কেন্দ্রে যাবেন।
এদিকে ইউপি চেয়ারম্যান, কমিশনার, মেম্বার প্রতিনিধি এবং থানা-ওয়ার্ড নেতারা বলছেন, 'মাইম্যান' ছাড়া সরকারি বরাদ্দ প্রাপ্তি প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। টিআর ও কাবিখার ফাণ্ড ছাড়া উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। আগামী বছরই ইউপি নির্বাচন। তাই যে প্রার্থী জিতলে টিআর-কাবিখার উন্নয়ন বেশি হবে সে প্রার্থীর পক্ষে প্রতিনিধিদের ভোটের প্রচারণা চলছে।
রাজনীতি-বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন আসলেই গ্রুপিং, আঞ্চলিকতা, জাত-পাতের দোহাই তুলে অনেকেই ফায়দা নিতে চায়। এ প্রসঙ্গে পর্যবেক্ষকদের অভিমত, এবারের বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের অবস্থানগত কারণে আঞ্চলিকতার প্রভাব খাটানোর সুযোগ খুবই ক্ষীণ। সেই পরিস্থিতি এখন আর বর্তমান নেই। তাছাড়া নির্বাচন এলেই সম্প্রদায়গত প্রভাব পড়ার আশঙ্কা বরাবরই উচ্চারিত হয়, কিন্তু দিন শেষে সবই ভেস্তে যায়- এমন নজির অতীতেও মানুষ দেখেছে।
রাজনীতি-বিশ্লেষকদের মতে, বিয়ানীবাজারবাসীর উন্নয়নে মেধাবী ও কর্মে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন যোগ্য ব্যক্তি নির্বাচন করা প্রয়োজন। কারণ, উপজেলা পরিষদের আওতাধীন কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রাণী সম্পদ, যুব উন্নয়ন কার্যক্রম-সহ ২০টি অধিদপ্তর রয়েছে। এ দপ্তরগুলোর উপকারিতা যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ পাবে, আশা করি, ভোটারগন সেই ব্যক্তিই নির্বাচিত করবেন। তাই চেয়ারম্যান পদে কে এগিয়ে আছেন, তার ফায়সালা ভোট বিপ্লবেই বেরিয়ে আসবে।
বিয়ানীবাজারে মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৭০ হাজার ৬১৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮৩ হাজার ৮৪৪ জন আর নারী ৮৬ হাজার ৭৭১ জন। এখানে ভোট কেন্দ্র মোট ৮৯টি।
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: আতাউর রহমান
আইন-উপদেষ্টা: ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী
বানিজ্যিক কার্যালয়: সমবায় মার্কেট, কলেজ রোড,
বিয়ানীবাজার পৌরসভা, সিলেট থেকে প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত।
ই-মেইল: 𝐩𝐚𝐧𝐜𝐡𝐚𝐤𝐡𝐚𝐧𝐝𝐚𝐞𝐲𝐞@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦 মোবাইল নম্বর: ০১৭৯২৫৯৮১২৯